ঢাকা ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কুষ্টিয়ায় প্রথম বানিজ্যিকভাবে রঙ্গিন ফুলকপি

রঙ্গিন ফুলকপি: দাম ভালো হওয়ায় আশার আলো কৃষকের

কুষ্টিয়ায় এবছর প্রথম বানিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে রঙ্গিন ফুলকপির আবাদ। দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশ ভালো। জেলা জুড়েই কৃষকরা আবাদ করে থাকেন সাদা ফুলের ফুলকপি। তবে এবারে বাজারের দাম ভালো পাওয়ার আশায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় কৃষকরা চাষ করছেন রঙ্গিন ফুলকপি। গাছ দেখতে সাদা ফুলকপির মতো হলেও ফুল বিভিন্ন রং এর। এর মধ্যে হলুদ ও পিংক রং এর ফুলকপির চাষ করছেন কৃষকরা।
বিগত বছরের মতো কৃষকরা যেমন ৬টি উপজেলাতেই ফুলকপির আবাদ করেছেন, তারপাশাপাশি এবার বেশি করছেন রঙ্গিন ফুলকপির চাষ। আর কুষ্টিয়ায় বানিজ্যিকভাবে এ রঙ্গিন ফুলকপি চাষ ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীসহ উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রবি মৌসুমে ৭৬৭ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৯১ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২২ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৫১ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ২৩০ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে সাদা ফুলকপির চাষ হয়েছে।
এছড়া যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় এই মৌসুমে মোট ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রঙ্গিন ফুলকপির বানিজ্যিক চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চাষ পদ্ধতি সাদা ফুলকপির মতো হলেও সাদা ফুলের তুলনায় বেশি লাভজনক বলে জানায় কৃষকরা।


কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান জানান, “আমি সাদা ফুলকপির আবাদ করি। এবারে কৃষি অফিস থেকে আমাকে রঙ্গিন ফুলকপির চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছিলো। সেখানে থেকে উপকরণও দিয়েছিলো। আমি ২০ শতাংশ জমিতে এ রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। গাছ বেশ ভালো হয়েছে তবে কয়েকদিনের মধ্যেই ফুল আসবে। আশা করছি বেশ ভালো ফলন ও দাম পাবো।
ভেড়ামারা উপজেলার ফকিরাবাদ এলাকার কৃষক মারুফ হোসেন জানান, মরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুনের চাষ করি। এবছর আমি রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। বাজারে এ রঙ্গিন ফুলের দাম বেশি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, পরিচর্যার খরচও দিয়েছে। আগামীতে এই এলাকায় অনেকেই এ চাষ করবে।
মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার মাধবপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ মিয়া জানান, “আমি এই রঙ্গিন ফুলকপির চাষ কোনদিন করিনি। পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। কিছুদিন আগে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমি বিভিন্ন উচ্চমুল্যের সবজি চাষের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারি যে, সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙ্গিন ফুলকপি বেশি লাভজনক। তাই কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় আমি ২০শতক জমিতে রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। আমি বিষমুক্ত ভাবে চাষ করছি। পোকা মারার জন্য হলুদ ফাঁদ এবং সেক্স ফেঁরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছি।”
তিনি আরো জানান, “এই এলাকার আমার আগে কেউ এ রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করেনি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ফুলকপির চারা, জৈবসার, রাসনায়িক সার, হলুদ ফাদ এবং ফেরোমন ফাঁদ এবং পরিচর্যার জন্য খরচও দিয়েছে। তাছাড়া সাদা ফুলকপির মতোই চাষাবাদ করতে হয়। আমার জমিতে এখনো ফুল আসা শুরু করেনি। ১০-১২ দিনের মধ্যেই ফুল চলে আসবে। গাছগুলো খুবই ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সাদা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আর রঙ্গিন ফুলকপি ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এখন সবজির দাম দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। আশা করছি দাম ভালো থাকলে আমিও অনেক বেশি লাভবান হতে পারবো।”
মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান এলাকার কৃষক কামাল হোসেন জানান, “সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙ্গিন ফুলকপি চাষটা বেশি লাভজনক হওয়ার কারণে আমি এবছর প্রথম এ কপির চাষ করেছি। এখনো ফুল ধরেনি গাছে। তবে আশা করছি ভালো ফলন ও দাম পাবো। কারণ ফুলকপি যখন মাঠ থেকে প্রায় শেষ হবে তখন আমি বিক্রি করতে পারবো। শীতকালীন সবজির দাম শুরুতে এবং শেষে ভালো পাওয়া যায়। আর রঙ্গিন ফুলকপির দাম তো বেশিই থাকে।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, “যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পে আওতায় আমরা রঙ্গিন ফুলকপি চাষে প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে এলাকায় চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু রঙ্গিন ফুলকপি চাষ নতুন একটি প্রযুত্তি তাই সার্বক্ষনিক আমরা মাঠ পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি।
পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী সেলিম আহম্মেদ জানান, “বাজারে ক্রেতারা যেটাতে আকৃষ্ট হয় সেটার দাম ভালো পাওয়া যায়। আমরা পাইকারী সাদা ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করি। তার তুলনায় রঙ্গিন ফুলকপির দাম পাইকারী ৫০-৬০টাকা, তবে খুরচা বাজারে এলাকা ভিক্তিক এর দাম কমবেশি হয়।
কুষ্টিয়া পৌর মিনিসিপি বাজারের ব্যবসায়ী হরিপুর এলাকার তুহিন আলী জানান, “শীতকালীন সবজি বাজারে পাওয়া গেলেও দাম ভালো রয়েছে। সাদা ফুলকপি এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। আর রঙ্গিন ফুলকপি এখনো বাজারে খুব একটা বেশি উঠেনি। কুষ্টিয়ার বাইরে থেকে কিছু রঙ্গিন ফুল আসছে সেগুলো ১০০ টাকার উপরে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। তবে সাদার তুলনায় রঙ্গিন ফুলের দাম সবসময়ই বেশি থাকে।”
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, “পুষ্টিগুণ ও বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় সাদা ফুল কপির চেয়ে রঙ্গিন ফুলকপি চাষ বেশি লাভজনক। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের এ ফুলকপি চাষে পরামর্শ প্রদান করে থাকি। সেই সাথে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের রঙ্গিন ফুলকপি চাষে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দিয়েছি। আগামীতে এ রঙ্গিন ফুলকপির আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, “খোরপোশ কৃষিকে বানিজ্যিক ও লাভজনক করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলাসহ যশোর কৃষি অঞ্চলের ৩১টি উপজেলায় রঙ্গিন ফুলকপি চাষে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী এবং উপকরণ সর্বারহ করে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করছি। ইতিমধ্যে অনেক স্থানে কৃষকরা এ রঙ্গিন ফুলকপি বাজারজাত করে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছে। পুষ্টিগুন এবং বাজারে দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী এ রঙ্গিন ফুলকপি চাষে।

বিদেশি ঋণের প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন তিন মাস অন্তর পাঠানোর নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

কুষ্টিয়ায় প্রথম বানিজ্যিকভাবে রঙ্গিন ফুলকপি

রঙ্গিন ফুলকপি: দাম ভালো হওয়ায় আশার আলো কৃষকের

আপডেট সময় ০২:৩৩:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

কুষ্টিয়ায় এবছর প্রথম বানিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে রঙ্গিন ফুলকপির আবাদ। দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশ ভালো। জেলা জুড়েই কৃষকরা আবাদ করে থাকেন সাদা ফুলের ফুলকপি। তবে এবারে বাজারের দাম ভালো পাওয়ার আশায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় কৃষকরা চাষ করছেন রঙ্গিন ফুলকপি। গাছ দেখতে সাদা ফুলকপির মতো হলেও ফুল বিভিন্ন রং এর। এর মধ্যে হলুদ ও পিংক রং এর ফুলকপির চাষ করছেন কৃষকরা।
বিগত বছরের মতো কৃষকরা যেমন ৬টি উপজেলাতেই ফুলকপির আবাদ করেছেন, তারপাশাপাশি এবার বেশি করছেন রঙ্গিন ফুলকপির চাষ। আর কুষ্টিয়ায় বানিজ্যিকভাবে এ রঙ্গিন ফুলকপি চাষ ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীসহ উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রবি মৌসুমে ৭৬৭ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৯১ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২২ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৫১ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ২৩০ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে সাদা ফুলকপির চাষ হয়েছে।
এছড়া যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় এই মৌসুমে মোট ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রঙ্গিন ফুলকপির বানিজ্যিক চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চাষ পদ্ধতি সাদা ফুলকপির মতো হলেও সাদা ফুলের তুলনায় বেশি লাভজনক বলে জানায় কৃষকরা।


কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান জানান, “আমি সাদা ফুলকপির আবাদ করি। এবারে কৃষি অফিস থেকে আমাকে রঙ্গিন ফুলকপির চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছিলো। সেখানে থেকে উপকরণও দিয়েছিলো। আমি ২০ শতাংশ জমিতে এ রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। গাছ বেশ ভালো হয়েছে তবে কয়েকদিনের মধ্যেই ফুল আসবে। আশা করছি বেশ ভালো ফলন ও দাম পাবো।
ভেড়ামারা উপজেলার ফকিরাবাদ এলাকার কৃষক মারুফ হোসেন জানান, মরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুনের চাষ করি। এবছর আমি রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। বাজারে এ রঙ্গিন ফুলের দাম বেশি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, পরিচর্যার খরচও দিয়েছে। আগামীতে এই এলাকায় অনেকেই এ চাষ করবে।
মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার মাধবপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ মিয়া জানান, “আমি এই রঙ্গিন ফুলকপির চাষ কোনদিন করিনি। পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। কিছুদিন আগে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমি বিভিন্ন উচ্চমুল্যের সবজি চাষের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারি যে, সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙ্গিন ফুলকপি বেশি লাভজনক। তাই কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় আমি ২০শতক জমিতে রঙ্গিন ফুলকপির চাষ করেছি। আমি বিষমুক্ত ভাবে চাষ করছি। পোকা মারার জন্য হলুদ ফাঁদ এবং সেক্স ফেঁরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছি।”
তিনি আরো জানান, “এই এলাকার আমার আগে কেউ এ রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করেনি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ফুলকপির চারা, জৈবসার, রাসনায়িক সার, হলুদ ফাদ এবং ফেরোমন ফাঁদ এবং পরিচর্যার জন্য খরচও দিয়েছে। তাছাড়া সাদা ফুলকপির মতোই চাষাবাদ করতে হয়। আমার জমিতে এখনো ফুল আসা শুরু করেনি। ১০-১২ দিনের মধ্যেই ফুল চলে আসবে। গাছগুলো খুবই ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সাদা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আর রঙ্গিন ফুলকপি ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এখন সবজির দাম দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। আশা করছি দাম ভালো থাকলে আমিও অনেক বেশি লাভবান হতে পারবো।”
মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান এলাকার কৃষক কামাল হোসেন জানান, “সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙ্গিন ফুলকপি চাষটা বেশি লাভজনক হওয়ার কারণে আমি এবছর প্রথম এ কপির চাষ করেছি। এখনো ফুল ধরেনি গাছে। তবে আশা করছি ভালো ফলন ও দাম পাবো। কারণ ফুলকপি যখন মাঠ থেকে প্রায় শেষ হবে তখন আমি বিক্রি করতে পারবো। শীতকালীন সবজির দাম শুরুতে এবং শেষে ভালো পাওয়া যায়। আর রঙ্গিন ফুলকপির দাম তো বেশিই থাকে।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, “যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পে আওতায় আমরা রঙ্গিন ফুলকপি চাষে প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে এলাকায় চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু রঙ্গিন ফুলকপি চাষ নতুন একটি প্রযুত্তি তাই সার্বক্ষনিক আমরা মাঠ পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছি।
পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী সেলিম আহম্মেদ জানান, “বাজারে ক্রেতারা যেটাতে আকৃষ্ট হয় সেটার দাম ভালো পাওয়া যায়। আমরা পাইকারী সাদা ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করি। তার তুলনায় রঙ্গিন ফুলকপির দাম পাইকারী ৫০-৬০টাকা, তবে খুরচা বাজারে এলাকা ভিক্তিক এর দাম কমবেশি হয়।
কুষ্টিয়া পৌর মিনিসিপি বাজারের ব্যবসায়ী হরিপুর এলাকার তুহিন আলী জানান, “শীতকালীন সবজি বাজারে পাওয়া গেলেও দাম ভালো রয়েছে। সাদা ফুলকপি এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। আর রঙ্গিন ফুলকপি এখনো বাজারে খুব একটা বেশি উঠেনি। কুষ্টিয়ার বাইরে থেকে কিছু রঙ্গিন ফুল আসছে সেগুলো ১০০ টাকার উপরে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। তবে সাদার তুলনায় রঙ্গিন ফুলের দাম সবসময়ই বেশি থাকে।”
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, “পুষ্টিগুণ ও বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় সাদা ফুল কপির চেয়ে রঙ্গিন ফুলকপি চাষ বেশি লাভজনক। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের এ ফুলকপি চাষে পরামর্শ প্রদান করে থাকি। সেই সাথে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের রঙ্গিন ফুলকপি চাষে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দিয়েছি। আগামীতে এ রঙ্গিন ফুলকপির আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, “খোরপোশ কৃষিকে বানিজ্যিক ও লাভজনক করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলাসহ যশোর কৃষি অঞ্চলের ৩১টি উপজেলায় রঙ্গিন ফুলকপি চাষে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী এবং উপকরণ সর্বারহ করে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করছি। ইতিমধ্যে অনেক স্থানে কৃষকরা এ রঙ্গিন ফুলকপি বাজারজাত করে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছে। পুষ্টিগুন এবং বাজারে দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী এ রঙ্গিন ফুলকপি চাষে।